ড. কাজল রশীদ শাহীন : করোনা মহামারীর নিদানকালে উদোম হয়ে গেছে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের হালহকিকত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা বলে কি আদতে কিছু আছে? সাহেদ-সাবরিনা, রিজেন্ট-জেকেজির ভয়ঙ্কর উত্থানে তারাপদ রায়ের কবিতার শব্দরাজি যেন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ভেতর-বাইরের রূঢ় সত্য। আসুন, একটু কষ্ট করে পড়ে নিই ওই কবিতাটি- “আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া ভেবেছিলাম,/যার উদ্দেশে ধ্রুপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম,/গতকাল বলাইবাবু বললেন, ‘ঐটি বানরলাঠি গাছ।’/অ্যালসেশিয়ান ভেবে যে সারমেয় শাবকটিকে/আমরা তিন মাস বকলস পরিয়ে মাংস খাওয়ালাম/ক্রমশ তার খেঁকিভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।/আমরা টের পাইনি/আমাদের ঝর্ণাকলম কবে ডট পেন হয়ে গেছে/আমাদের বড়বাবু কবে হেড হেড অ্যাসিট্যান্ট হয়ে গেছেন/আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।/আমরা বুঝতে পারিনি।/আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।”
সত্যি আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এই সর্বনাশ শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আমাদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জীবনকে সংশয়িত করেছে, জীবিকাকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে।
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ যা কিছু করেছে, প্রশাসন ও মিডিয়ার নাকের ডগার ওপর বসে করেছে। নিজের সুবিধামতো সব অপকর্মে ব্যবহার করেছে মিডিয়া ও প্রশাসনের লোকজনকে। সাহেদ নিশ্চয় তাদেরই ব্যবহার করতে পারঙ্গম হয়েছেÑ যারা তার মতো। প্রবাদ, প্রবচন, বাগধারা তো এ কথায় বলে- ‘মানিকে মানিক চেনে …।’ এখন সাহেদকে নিয়ে যেভাবে লেখালেখি, অনুসন্ধান চলছেÑ সেভাবে তাদের নিয়ে কেন নয়। প্রশাসন প্রশ্রয় দিয়েছে বলেই তো ফুলেফেঁপে বেড়ে উঠেছে এবং উঠছে সাহেদের মতো ভয়ঙ্কর প্রতারকরা। সাহেদকে নিয়ে যা কিছু হচ্ছে, এর সবই কি তার চোখ দিয়ে দেখানো হচ্ছে না? কিংবা তার সুবিধাভোগীরা যেভাবে বলছে, সেটিই উপস্থাপন করে নিজেদের দায় ও দায়িত্ব শেষ করছি না? যেমনÑ
এক. সাহেদ পুলিশ প্রটোকল নিয়ে চলাফেরা করত। বলা হচ্ছে, সাহেদ নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করে পুলিশ প্রটোকল চাইত যে, সেটি দিতে বাধ্য হতো তারা। অর্থাৎ যদু-মধু যে কেউ রাঘববোয়াল সেজে পুলিশ প্রটোকল চাইলেই যেন পাওয়া যায় এবং সেখানে যেন কোনো চেইন অব কমান্ড নেই, নেই ঊর্ধ্বতনদের অবহিত কিংবা পারমিশন নেওয়ার বালাই। পুলিশ প্রশাসনের সেসব লোক কারাÑ যারা সাহেদকে আমাদের সর্বনাশ করানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো মিলবে কি?
দুই. সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল যে এলাকায় অবস্থিত, ওই এলাকার থানা ম্যানেজ করেই যে সে তার দানবীয় কর্মকা- পরিচালনা করেছেÑ এ তো এখন আর অজানা নয়। তা হলে তাদের কি আইনের আওতায় আনা হবে? জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাদের? সাহেদ না হয় ধরা পড়ল। কিন্তু সাহেদের সঙ্গে সরকারের বেতনভুক্ত অপকর্মকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কি অধরাই থেকে যাবে? সাহেদের নামে ৩২টা মামলা রয়েছে। আর সে পুলিশ প্রটোকল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তা হলে তো প্রশিক্ষিত এ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা নিয়েই জনমনে সন্দেহ তৈরি হওয়া সঙ্গত এবং স্বাভাবিক।
রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স রিনিউ হয় না ছয় বছর ধরে। এসব দেখভাল করার দায়িত্বে কি সরকারের কেউ নেই? যদি থাকে, তা হলে তারা করেটা কী! জনগণের কষ্টের টাকায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী পুষে কী লাভ পাচ্ছে জনগণ? নাকি জনগণের বারোটা বাজানোর জন্যই যথাযোগ্য মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে তাদের লালন-পালন করা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে রহস্যজনক নীরবতা ছাড়া মেলে না কিছুই।
তিন. সাহেদের জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে মিডিয়ায় তার স্ত্রীর খবর বেরিয়েছে, সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, সাহেদের অপকর্মের কিছুই জানতেন না। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর মিথ্যা কি আর কিছু হতে পারে? ম্যাট্রিক পাস, এমএলএম কোম্পানির দায়ে জেল খাটা স্বামী কোন জাদুবলে পুলিশ প্রটোকল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কোটি টাকার গাড়িতে চড়েÑ এসব প্রশ্ন কখনো কি উদিত হয়নি আপনার মনে? যে চ্যানেলে সাহেদের স্ত্রীর খবর-সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো এবং এও বলা হলো, সাহেদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। শেষ কথা হয়েছে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর আগের রাতে। ঠিক তখনই ওই চ্যানেলের স্ক্রলে র্যাবের সূত্রে দেখানো হচ্ছে, মোবাইল ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সাহেদ। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র দেশ!
চার. সাহেদের বাবা মারা গেছেন। রাজধানীর একটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। খেয়াল করুনÑ রিজেন্ট হাসপাতালে কিন্তু নয়। এর মানে বাবাও কি জানতেন গুণধর পুত্রের গুণের কথা? আমাদের প্রশ্ন অবশ্য অন্যখানে। সাহেদের বাবা যখন আইসিইউয়ে মরণাপন্ন, তখন পরিবারের কেউ নাকি যোগাযোগ করেনি। সাহেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাকি এই নিয়ে চিন্তিত ছিল। এ ব্যাপারে খবরও বেরিয়েছে। প্রশ্ন হলো, সাহেদের বাবা মারা যাওয়ার পর সবকিছুর সুরাহা হলো কীভাবে? কে বা কারা লাশ গ্রহণ করল, হাসপাতালের মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধ করল? এ দেশের হাসপাতালগুলোয় বিল পরিশোধ না করতে পারার কারণে লাশ নিয়ে জোঝাজুঝি তো হামেশাই হয়। এখানে তো তেমন কিছু হলো না। কী জাদুবলে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে গেল! রঙ্গভরা বঙ্গ দেশে তো সবকিছুই সম্ভব। আর ম্যানেজ করতে ওস্তাদ সাহেদের পক্ষে এটা অসম্ভব কী! ম্যানেজ করতে ওস্তাদ সাহেদ কি তা হলে সবকিছু ম্যানেজে করেই চলেছে?
পাঁচ. শুধু প্রশাসন বা সরকারের বড় বড় পদধারীর সঙ্গে ছবি তুলে বা ম্যানেজ করে ক্ষান্ত হয়নি মো. সাহেদ। আমাদের প্রণম্যজনদের (!) ড্রয়িংরুমেও পৌঁছে গিয়েছিল সে। ঘর-দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরও সাহেদ ওনাদের ড্রয়িংরুম সতীর্থ হয়ে উঠেছিলেন, নাকি আমন্ত্রণে ধন্য হয়েই হয়ে উঠেছিলেন অন্দরমহলের মান্যবর সভ্য? সাহেদ শুধু নিজে নষ্ট হয়নি, সে এই সমাজ-রাষ্ট্রটিকেও নষ্ট করেছে। পচা জিনিসের ধর্ম যেমন নিজে শুধু পচে না, অন্যকেও পচিয়ে তোলেÑ যদি পচা জিনিসটিকে ফেলে দেওয়া না হয়। ঠিক যেভাবে ক্যানসার তার সর্বনাশা ক্ষতকে শরীর অভ্যন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে মৃত্যু করে নিশ্চিত। ক্যানসাররূপী ক্ষত-নষ্ট-পচা সাহেদকে যেহেতু আমরা ফেলে দিইনি; উল্টো তাকে অন্যায়ভাবে-অন্যায্যভাবে সহযোগিতা করেছি, থানা-পুলিশকে ব্যবহার করতে দিয়েছি, অফিসে অফিসে ও মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রণালয়ে জামাই আদর করেছি, ফটোসেশন করিয়েছি, মিষ্টিমুখ করিয়েছি, বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করিয়েছিÑ সেহেতু আমরাও সাহেদের মতো নষ্ট হয়ে গিয়েছি, পচে গিয়েছি, ক্ষেত্রবিশেষে টাউট-বাটপাড় হয়েও গিয়েছি। আর এসবের মধ্য দিয়ে বুঝতে পারিনি, কত বড় সর্বনাশ আমাদের হয়ে গেছে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বহুকাল আগেই বলেছেন চিরন্তন এই সত্য কথাÑ ‘যখন দেখবে শিক্ষক আর চিকিৎসক অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, তখন ধরে নিও সমাজ অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে।’
ছয়. মো. সাহেদকে সর্বনাশ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ দেওয়া হয়েছে টক শোতে অতিথি করার মধ্য দিয়ে। অথচ সাহেদের টক শো যদি আপনারা একটু কষ্ট করে শোনেন, তা হলে দেখবেন- সে যে একজন মহাটাউট, তা বোঝার জন্য আপনাকে সক্রেটিস না হলেও চলবে। শুধু বোঝেননি আমাদের টক শো উপস্থাপক, প্রডিউসর, পরিকল্পক-গবেষক আর অতিথি নির্বাচন করার নীতিনির্ধারকরা। মিডিয়া যদি নিজেই সাদা-কালো, ভালো-মন্দ চিহ্নিত করতে অপারগ হয়, গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খায়Ñ তা হলে তার কাছে কিছু প্রত্যাশা করা বাতুলতা নয় কি? সাহেদকা-ের কীর্তিকর্ম, জারিজুরি ফাঁস হওয়ার পর কোনো চ্যানেল কি নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অভ্যন্তরীণ শুদ্ধ অভিযান চালিয়েছে? মালিকপক্ষ কিংবা চ্যানেলের পরিচালনা পর্ষদ কি টক শোতে কোনো পরিবর্তন এনেছে, নিদেনপক্ষে কোনো শাস্তি কিংবা জবাবদিহির খ-চিত্র উপস্থাপন করেছে। করেনি। কোনো চ্যানেল কিংবা টক শোর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। হয়নি। অথচ হওয়াটাই তো যুক্তিসঙ্গত ছিল। কারণ আপনি সাহেদকে অতিথি করে শুধু ভুল করেননি, চরম অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ করেছেন।
সাত. সাহেদ যে কত বড় অপরাধ করেছে, তা যেমন টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা যাবে না- তেমনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিরও সর্বনাশ কতটা ঘটিয়েছে, তা কল্পনা করা যাবে না। সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগী শনাক্তের জালিয়াতির ঘটনায় তিনটি বিষয় কখনই পূরণ হওয়ার নয়-
ক. রিজেন্ট হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। ফলে সেখানে যারা ভর্তি হয়ে মারা গেছেন, তারা বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেছেন। মনে করা জরুরি, সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই মারা গেছেন। খোকনের মতো রিজেন্টে যারা চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে মারা গেলেনÑ কে নেবে ওই মৃত্যুর দায়? সাহেদের প্রতারণা-জালিয়াতি, রিজেন্টের চিকিৎসকার নামে অপচিকিৎসা কিংবা চিকিৎসাহীনতার দায় তো রাষ্ট্রেরই। কিন্তু রাষ্ট্র কি পারবে ওই মৃত্যুর দায় নিতে, ক্ষতিপূরণ করতে?
খ. রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা রোগী শনাক্তকরণে মনগড়া ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশে করোনা রোগীর যে পরিসংখ্যান আমরা জানি, এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ দেশে কিংবা বিদেশে বাংলাদেশের করোনা রোগীর পরিসংখ্যান শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, কোনোভাবেই এটি আর সংশোধনযোগ্যও নয়। তাই করোনার মতো বিশ্বগ্রাসী একটি মহামারী আমাদের ওপর কতটা এবং কেমন প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে যথাযথ গবেষণা ও চারিত্র্য কাঠামো নির্ণয় দুরূহ এবং দুঃসাধ্য হয়ে গেল।
গ. রিজেন্ট হাসপাতালের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির যে সংকট তৈরি হলো, তা কোনোভাবে পূরণ হওয়ার নয়। কেননা বিশ্বাস একবার প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা দূরীকরণ অসম্ভব বৈকি। করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট ইতালিতে গিয়ে যখন মিথ্যা ও ভুল প্রমাণিত হলো এবং তারা যেভাবে প্রবাসীদের ফেরত পাঠিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন- এতে সারাবিশ্ব জেনে গেল, করোনার মতো মহামারীকালে করোনা রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এর চেয়ে লজ্জা ও বেদনার আর কী হতে পারে? কথায় কথায় আমরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অহংবোধে উল্লসিত হই। অথচ সেই প্রবাসীদের ক্ষেত্রে আমরা কেন এ রকম উন্নাসিকতার পরিচয় দিই। প্রবাসীদের ক্ষেত্রে কি সরকারিভাবে করোনা রোগী শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা যেত না?
আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়, প্রয়োজনানুগ নয়, রোগী বান্ধব নয়- এসব আমরা আগেই জানতাম। আমরা জানতাম, আমাদের ছোট-বড় প্রায় সব হাসপাতালই প্রয়োজন ছাড়া সিজারিয়ান বেবির জন্ম দেয়। আমরা জানতাম, আমাদের প্রণম্য চিকিৎসকরাও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও টেস্ট দিতে পারঙ্গম এবং সিদ্ধহস্ত। আমরা জানতাম, আমাদের হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা ত্রুটিযুক্ত। ভেন্টিলেশন, আইসিইউগুলো মূলত রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ফাঁদ। আমরা জানতাম, সরকারি হাসপাতাল মানেই দালাল-ভুঁইফোড়দের দৌরাত্ম্য আর বিড়াল-ইঁদুর, ছুঁচো-আরশোলা, মশা-মাছি ও ছারপোকার রাজত্ব।
কিন্তু আমরা জানতাম না, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা এদের বাইরেও সাহেদ-সাবরিনাদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। আমরা জানতাম না, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা রিজেন্ট-জেকেজির পৃষ্ঠপোষণা করার জন্যই তার প্রায় সব কার্যক্রম জারি রেখেছে। আমরা জানতাম না, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রিজেন্ট-জেকেজির মতো সর্বনাশা প্রতিষ্ঠানগুলোর দোসর হয়ে উঠেছে কিংবা তাদের কেশর ছোঁয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। আমরা জানতাম না, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবান্তর নেই। আর জানতাম না বলেই আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এই ফাঁকে আমাদের কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে গেছে বানরলাঠি আর আমাদের সারমেয়র প্রকট হয়েছে খেঁকিভাব।
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। কারণ আমাদের সর্বনাশকারীরা জানে, তাদের অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয় না। তাদের সতীর্থ-দোসর-সহযোগীরা জানে, তাদের হাজির হতে হবে না আদালাতের কাঠগড়ায় কিংবা জবাবদিহির মুখোমুখি। আমাদের সর্বনাশকারীরা জানে, এ দেশে তারাই ভালো থাকে। ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা পায়, টক শোর অতিথি হয়, ফটোসেশনের মওকায় ভরে যায় তাদের ইহজাগতিক জীবন। আমাদের সর্বনাশকারীরা ভালো করেই জানে, আমাদের সুশীলদের বিবেক অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে এবং ওই বিবেক তারাই কিনে নিয়েছে। ফলে তাদের গতায়াত সর্বত্র। তারা বিনাবাধায় দাপিয়ে বেড়ায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল। ফটো খিঁচায় যাকে দরকার, তার সঙ্গে। এই যে এত এত মানুষের সঙ্গে সাহেদের মতো লিজেন্ড প্রতারকের ফটোসেশন ভাইরাল হলো, তা নিয়ে কারও কোনো বক্তব্য কি পাওয়া গেছে, নিদেনপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে? আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। কারণ আমরা সর্বনাশকারী ও তার দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছি, দিয়ে চলেছি।
ড. কাজল রশীদ শাহীন : সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক
Leave a Reply